Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

লবণাক্ততা দূরীকরণে সমন্বিত কার্যক্রম

লবণাক্ততা দূরীকরণে সমন্বিত কার্যক্রম

মোঃ আসাদুল্লাহ
লবণাক্ততা মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় একটি অন্যতম অন্তরায় হিসেবে সারা বিশ্বে বিবেচিত। শস্য উৎপাদন, খাদ্য চাহিদা মেটানো, পুষ্টিকর ফসল নিশ্চিতকরণহ কৃষি কাজের প্রধান বাধা হিসেবে মাটির লবণাক্ততা দিন দিন হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। সারা বিশ্বে প্রায় ১২০টি দেশের ৯৫৩ মিলিয়ন হেক্টরেরও অধিক জমি ইতোমধ্যে লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে প্রায় ৭-৮% ফসলের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। বৈশ্বিক বিশ্লেষণে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে লবণাক্ততার অথবা ক্ষারীয়তার কারণে অনাবাদি হয়ে পড়েছে। লবণাক্ততার পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট ঘন ঘন খড়ার ফলে বিশ্বে দরিদ্রতা বাড়ছে এবং ক্ষূদ্র চাষিদের জীবিকার উপায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। লবণাক্ততার কারণে প্রতি বছর ২৭.৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার মূল্যের ফসল নষ্ট হচ্ছে। অন্য একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্বে ২৩০ হেক্টর সেচ জমির মধ্যে ১৯.৫ শতাংশ জমি লবণাক্ততাপূর্ণ। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ২৯ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকার জমি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে শতাংশের হিসাবে প্রায় ৫৩%। প্রায় ৩০ শতাংশ আবাদি জমির মাটিতে লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশব্যাপী প্রায় ১২ শতাংশ জমি এই লবণাক্ততার কবলে নিমজ্জিত।


বিশ্বব্যাপী মাটির লবণাক্ততা প্রতিরোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২১ উদ্যাপিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘লবণাক্ততা রোধ করি, মাটির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করি।’


পরিবর্তিত জলবায়ুর কারণে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাংলাদেশের বিরাট একটা অংশের মাটি লবণাক্ততায় আক্রান্ত হবে যা উপকূলীয় এলাকায় ফসল চাষের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ক্যাটায়ন এবং ক্লোরিন ও সালফেট অ্যানায়ন মাটিতে দ্রবীভূত লবণ হিসেবে জমা থাকে।


লবণাক্ত মাটিতে গাছের বৃদ্ধির জন্য অনেক রকমের সমস্যা দেখা যায়। যেমন :  লবণাক্ত মাটিতে গাছ ঢলে পড়ার মাত্রা কয়েকগুণ বেশি। মাটির প্রয়োজনীয় আর্দ্রতার পরিমাণ কম। মাটিতে দ্রবীভূত অত্যধিক লবণ মাটির অভিস্রবণ ক্রিয়াকে গাছের কোষের মধ্যস্ত তরলের চেয়েও বাড়িয়ে দেয় ফলে রসের উৎস্রোতে ব্যাঘাত ঘটায়। মাটিতে উচ্চ লবণ জমা হওয়ার ফলে গাছের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগত উপাদান সংগ্রহে বাধাপ্রাপ্ত হয়। মাটিতে দ্রবীভূত লবণের পরিমাণ বেড়ে গেলে সরাসরি গাছের মূলের ক্ষতি করে এবং বীজের অঙ্কুরোদগমে বাধা প্রদান করে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক লবণাক্ততায় আক্রান্ত জমির পরিমাণ (মিলিয়ন হেক্টরে) সারণি দ্রষ্টব্য।


লবণাক্ততা দূরীকরণে সমন্বিত কার্যক্রম
মানুষ গভীরভাবে বিশ্বাস করে যে, লবণাক্ত জমি ব্যবহারযোগ্য নয়। বছরের পর বছর গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলে এখন লবণাক্ত জমিতে খুব ভালোভাবে ফসল ফলানো সম্ভব। লবণসহিষ্ণু জাত, নিয়মিত সেচ, পানি ব্যবস্থাপনা, উপযুক্ত মাত্রার সার প্রয়োগ ইত্যাদি সকল প্রযুক্তির সম্মিলিত প্রয়োগের মাধ্যমেই লবণাক্ত জমিকে পুনরায় ব্যবহার করা সম্ভব। বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৮টি জেলার ৯৩টি উপজেলা বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততায় আক্রান্ত। লবণাক্ততার কারণে এই এলাকার শস্য নিবিড়তা মাত্র ১৩৩ শতাংশ। শুকনো মৌসুমে এই এলাকার অধিকাংশ জমি পতিত থাকে। কোনও কোনও এলাকায় সীমিত আকারে তিল বা মুগডালের চাষ হয়। আবার দেরিতে পানি অপসারণের কারণে সময়মতো তিল বা ডালের বপন করা সম্ভব হয় না। দেরিতে তিল, ডালের বপনের ফলে তিল, ডাল পরিপক্ব হওয়ার পূর্বেই বর্ষার পানিতে তা নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে এই এলাকায় শুকনো মৌসুমে নিরাপদ পানির (লবণমুক্ত) অভাবে আমন ধানের পরে বোরো ধান চাষও সম্ভব হয়ে ওঠে না।


মাটির উপরিস্তরের লবণাক্ত স্তর ভালোভাবে চেঁচে ফেলতে হয়। জমিতে সেচ দিয়ে ও মাটির নিচে গভীর পয়ঃপ্রণালী কেটে সুষ্ঠু নিকাশ ব্যবস্থা করলে জমির লবণাক্ততা দূর করা সম্ভব। এ ছাড়া, বৃষ্টির জলের সাহায্যে নিঃসরণ পদ্ধতিতে বাড়তি লবণ দূর করা যায়। এই ধরনের মাটির সংস্কারে জিপসাম, সালফার, ফেরাস সালফেট, লাইম সালফার ব্যবহার করা দরকার। সে সাথে জৈব পদার্থ যেমন-সবুজ সার, খামারের সার এবং আবর্জনা সার প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। লবণাক্ত মাটিতে যে শস্য ভাল হয় তা চাষ করতে হবে। মিষ্টি বিট, তুলা, বার্লি অধিক লবণ সহনশীল। ধান, ভুট্টা, গম, সিম, সূর্যমুখী মাঝারি সহনশীল। অল্প সহনশীল হিসাবে মাঠ শিম চাষ করা যেতে পারে। ইতোমধ্যে উপকূলবর্তী বিপুল এলাকার লবণাক্তজমিতে এসব ফসলের জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি চাষিদের মধ্যে দ্রুত সম্প্রসারণের কাজ চলছে।  সম্প্রতি ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় ঘেরের আইলে আগাম শিম চাষ, অফসিজন তরমুজ ও মরিচ চাষ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।


লবণাক্ত মাটিকে চাষাবাদের উপযোগী করার জন্য দ্রবণীয় লবণকে মাটি থেকে সরিয়ে দিতে হবে।  লবণাক্ত মাটিকে পুনরুদ্ধার বা পরিশোধন করা যায় বিভিন্নভাবে যেমন : যদি জমির ওপর খুব বেশি লবণ জমে যায় তবে তা চেঁচে পরিষ্কার করলে লবণাক্ততা কমে যায়। অনেক সময় লবণ পরিষ্কার করার পর অন্যস্থান থেকে অলবণাক্ত মাটি এনে ভরাট করা হয়। পানির সাথে লবণ উঠে আসার ফলে কয়েক দিন পর জমি আবার লবণাক্ত হয়ে পড়ে। এই পদ্ধতি সীমিত ছোট এলাকার জন্য প্রযোজ্য।


বাষ্পায়ন হ্রাস পেলে অন্তর্ভূমি হতে লবণ ভূত্বকে উঠে আসে না। এ জন্য মালচিং এবং বিভিন্ন ধরনের বাষ্পরোধক ব্যবহার করে মাটির লবণাক্ততা কমানো যায়।
ভূগর্ভস্থ পানির উচ্চতা ৮-১০ ফুট নিচে থাকা উচিত। পানি নিষ্কাশনের দ্বারাই পানির উচ্চতাকে সুবিধাজনকভাবে নিচে রাখা প্রয়োজন। পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য টালি নালা, খোলা নালা, আবৃত নালা, কুয়া হতে বাষ্প করে পানি বের করে দেয়া যায়।


প্লাবন সেচের মাধ্যমে লবণজাতীয় পদার্থগুলোকে পানিতে দ্রবীভূত করা হয় এবং প্লাবনের মাধ্যমে এই দ্রবীভূত লবণগুলোকে ধুয়ে জমি থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। এরূপ জমিতে সমন্বিত রেখা বরাবর ছোট ছোটভাবে বিভক্ত করে নেয়া হয় এবং প্রত্যেক জমিতে আইল বেঁধে উঁচু করা হয়। এরপর ঢালের আড়াআড়িভাবে ভেলির মতো করে দেয়া হয়। এরপর পানি সেচ করে প্রতিটি জমি ভালোভাবে প্লাবিত করে দিতে হয়।


বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জমির লবণ হ্রাস করার পর লবণ সহ্য করতে পারে এমন ফসল (ধান:বিআর২৩, ব্রিধান৪০, ব্রিধান৪১, ব্রিধান৪৭, বিনাধান-৮, বিনাধান-১০, তিল, চীনাবাদাম প্রভৃতি) চাষ করতে হবে। এ ছাড়া জৈব ও সবুজ সার মাটিতে প্রয়োগ করলে তা থেকে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড বের হয় তা লবণাক্ততা কমাতে সাহায্য করে।


যেহেতু উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ত পানি দ্বারা বাগদা চিংড়ি চাষের ফলে লবণাক্ততা বাড়ছে তাই এর পরিবর্তে মিষ্টি পানির গলদা চিংড়ি চাষ করা যেতে পারে। এভাবে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে লবণাক্ত মাটিকে চাষাবাদের উপযোগী করে তোলা যায়।


পরিশেষে, দেশের উপকূল অঞ্চলে যে হারে লবণাক্ততা দিন দিন বেড়ে চলেছে সেই হারে প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।

অঞ্চল মোট এলাকা লবণাক্ত মাটি   সোডিক মাটি
  মিলিয়ন হেক্টর মিলিয়ন হেক্টর শতকরা মিলিয়ন হেক্টর শতকরা
আফ্রিকা ১৮৯৯ ৩৯ ২.০ ৩৪ ১.৮
এশিয়া পেসিফিক ও অস্টেলিয়া ৩১০৭ ১৯৫ ৬.৩ ২৪৯
ইউরোপ ২০১১ ০.৩ ৭৩ ৩.৬
লাটিন আমেরিকা ২০৩৯ ৬১ ৩.০ ৫১ ২.৫
নেয়ার ইস্ট ১৮০২ ৯২ ৫.১ ১৪ ০.৮
নর্থ আমেরিকা ১৯২৪ ০.২ ১৫ ০.৮
মোট ১২৭৮১ ৩৯৭ ৩.১% ৪৩৪ ৩.৪%

এ লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। যত দ্রুত লবণাক্ততা দূরীকরণে সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় ততই মঙ্গলজনক। সে সাথে বিশ^ মৃত্তিকা দিবস ২০২১ এর প্রতিপাদ্য স্বার্থক হবে।

 

লেখক : মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫। ফোন : ৫৫০২৮৩৬৯, ই-মেইল : dg@dae.gov.bd

 

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon